মুহুরী নদীর বানে ফেনী জেলা যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে, ইতিহাসে তার নজির নেই। সম্পদ যা গেছে, তা গেছে; এ জেলার তিন উপজেলার সাড়ে তিন লাখ মানুষ এখন প্রাণ বাঁচানো নিয়েই শঙ্কায়।
ফেনী জেলায় মুহুরী নদীর বন্যা যে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, তা ইতিহাসে বিরল। সম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা একপাশে থাকুক, এখন চার উপজেলায় বসবাসরত প্রায় চার লাখ মানুষ তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। বর্ষাকালের শেষ দিকে বাংলাদেশে আরেক দফা বন্যার সম্ভাবনা ছিল আগেই পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে এই বন্যা যে এতটা বিধ্বংসী হবে, তা কল্পনাও করেনি ফেনী জেলার মানুষ।
উজানে অতিরিক্ত ভারি বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে আকস্মিক এই বন্যায় মাত্র এক দিনের ব্যবধানে দেশের অন্তত ১০টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলায় প্রায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, এবং ৩৬ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ফেনী জেলার পরিস্থিতি বিশেষভাবে বিপর্যস্ত। ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা বন্যায় ডুবে গেছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই এবং অনেক জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্য জেলায় অবস্থানরত স্বজনরা তাদের প্রিয়জনদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এ দুর্যোগ এমন সময়ে আঘাত হেনেছে যখন বাংলাদেশ একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বন্যা মোকাবিলায় সরকারের তৎপরতা জোরদার করেছেন। তবে বন্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে ভারতীয় বাঁধ খোলার ফলে বন্যার সৃষ্টির অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্যার প্রধান কারণ হল অতি ভারি বর্ষণ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকারের মতে, সাম্প্রতিক লঘুচাপের কারণে বাংলাদেশে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে ফেনী এবং মুহুরী নদীসহ আশপাশের এলাকায়। উজানে ভারি বৃষ্টির ফলে পানির প্রবাহ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে নদীর আশপাশের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে।
ফেনী জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার অধিকাংশ জায়গা বন্যার কবলে পড়েছে। এছাড়া অন্যান্য জেলা যেমন কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট এবং লক্ষ্মীপুরের মানুষও এই বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পুনর্বাসনের জন্য সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।